ট্রু কলারেই বিপদ?
ল্যান্ডলাইন ফোনের রমরমার সময় ক্যালকাটা টেলিফোনস মোটা এক টেলিফোন ডাইরেক্টরি প্রকাশ করত। তাতে পুরো শহরের সমস্ত টেলিফোনের নাম্বার , নাম-ধাম সমস্ত কিছু পাওয়া যেত। সময়ের সাথে সাথে আমরা ল্যান্ডফোন ছেড়ে মোবাইল ফোনে অভ্যস্ত হয়েছি। মোবাইলে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এলে বোঝাই যায় না চেনা কেউ দরকারে ফোন করছে না কি ক্রেডিট কার্ড গছানোর জন্য ফোন করছে। সেই সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য সব থেকে ভালো উপায় ট্রু কলার এপ্লিকেশন। ফোন এলেই দিব্বি নাম দেখিয়ে দেয় কে কল করছে। সবার জন্য কত্তো সুবিধা। কিন্তু অসাবধানতার জন্য এই app বিপদ ডেকে আনবে না তো ?
আমাদের সবার প্রথমে বুঝতে হবে এই ট্রু কলার কাজ করে কিভাবে। ট্রু কলার যখন কেউ ইনস্টল করেন , ফোনের সমস্ত কন্টাক্ট নিজের কাছে কপি করে নেয় ট্রু কলার। তারপর সেখান থেকে দেখে নেয় কতগুলি কন্ট্যাক্ট আগে থেকেই রয়েছে এবং নতুন নাম-ফোন নাম্বার কি পাওয়া যাচ্ছে। নতুন নাম্বারগুলি কে এবার কেউ খুঁজলে বা এই নাম্বার থেকে কাউকে কল করা হলে নাম্বারের সাথে নাম ও দেখাবে এই সফ্টওয়ার।
কয়েকদিন আগে কলকাতার এক নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপিকার ভয়েস নোট ভাইরাল হয়েছিল , যেখানে কিভাবে ওনার সাথে প্রতারণা করে ওনার একাউন্ট থেকে বড় অংকের টাকা চুরি করেছিল সাইবার চোরেরা সেটা উনি বলেছিলেন। জামতারা গ্যাঙের থেকে যে ফোন এসেছিল সেটিকে ওনার ফোনে ট্রু কলার ওনার ব্যাঙ্কের নাম বলে দেখিয়েছিল। এরকম করা খুবই সহজ। একটা নতুন নাম্বার নেওয়ার পর যে নামে ওই নাম্বারটা কোন ট্রু কলার ব্যবহারকারী সেভ করবেন , ট্রু কলার সবাইকে সেটাই দেখাবে। সে জন্যই ট্রু কলার যদি কারো নাম “মেজ পিসি জিও” দেখায় তাতে যেমন অবাক হওয়ার কিছু নেই তেমনিই চোরের ফোন ও ব্যাংকের ফোন বলে দেখালেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। এটা মাথায় রাখতে হবে ট্রু কলার কেবল মাত্র আমার আপনার তথ্য নিয়েই ব্যবসা করে এবং সেটা ঠিক হবেই, এরকম কোন গ্যারান্টি নেই । তাই ট্রুকলার ব্যবহার করার সময় চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করলে বিপদ অনিবার্য ।
এবার ধরা যাক জামতারা গ্যাং যদি ফোন করে ব্যাংকের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে সরাসরি আপনার নাম করে বলে নমস্কার ‘অমুক’বাবু আমি আপনার ব্যাংক থেকে বলছি , তাহলে আপনার বিশ্বাস দৃঢ় হতে বাধ্য। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে এই ট্রু কলারের সৌজন্যে যে কেউ আপনার মোবাইল নাম্বার থেকে আপনার নাম জেনে নিতে পারে কয়েক সেকেন্ডে। তাই অচেনা কেউ আপনার সম্পর্কে কিছুটা জেনে আপনাকে ঠকানোর চেষ্টা খুব সহজেই করতে পারে ট্রু কলারের সাহায্য নিয়ে। সেইজন্য ট্রু কলার ব্যবহার করলে তার বিপদ গুলো সম্পর্কে সচেতন হয়েই ব্যবহার করা সমীচীন। আর নিজের নাম ট্রু কলারের ডেটাবেস থেকে সরাতে চাইলে https://www.truecaller.com/unlisting এই লিংকে গিয়ে নিজের নাম্বার দিলে ট্রু কলার ২৪ ঘন্টার মধ্যে আপনার নাম ও নাম্বার সরিয়ে দেবে ।
এরকম আরো আরো বিষয় নিয়ে আসব পরের এপিসোড গুলোতে।
পাশে থাকবেন, ভালো থাকবেন আর অতি অবশ্যই সতর্ক থাকবেন।
ধন্যবাদ